Muhammad Yunus
গ্রামীণ ব্যাংক ও এর প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূসকে ২০০৬ সালে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করার বিষয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হাতেগোনা যে কয়টি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ ছাপা হয়েছিল ‘অনীক’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পুরস্কারের রাজনীতি। নভেম্বর ২০০৬) ছিল তার মধ্যে অন্যতম। তখন এমন ধারণা ছিল যে, ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়টি অনেকটাই বাংলাদেশ বা এনজিও-প্রবণ দেশের বিষয়। ভারতে এ নিয়ে চিন্তিত হবার বা আলোচনা করার কিছু নেই। সেসময় অনেকেই বুঝে উঠতে পারেননি যে, চার বছরের মধ্যে মুহাম্মদ ইউনূস কথিত ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দারিদ্র্যকে জাদুঘরে প্রেরণ প্রক্রিয়ার অন্যতম শিকার বা উদাহরণ হয়ে উঠবে ভারত। বিগত দু’ দশকে ভারতে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী ৩,০০০ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যার মধ্যে বর্তমানে সক্রিয় আছে ৪০০টি। সেটিও বড় কোনো তথ্য নয়; গত বছরের মার্চ থেকে নভেম্বরের মধ্যে অন্ধ্র প্রদেশে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর জুলুমে ৮০ জন দরিদ্র নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করার পর সারা ভারত নড়েচড়ে ওঠে। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে চলতি আলোচনায় বিশেষ কয়েকটি দেশের সঙ্গে১ ভারতের নাম বারবার উঠে আসছে শুধু দরিদ্র ঋণগ্রহীতাদের আত্মহননের কারণে নয়; পুঁজির চরিত্র বুঝতে অক্ষম (?) এই অর্থনীতিবিদ একদা বৈদেশিক সাহায্য দিয়ে শুরু হওয়া ঋণ কার্যক্রমকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এবং তা দিয়ে বহুজাতিক কোম্পানির পুঁজি-পণ্য-সেবার বাজারের পরিধি বিস্তারের জন্য লগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষুদ্রঋণ খাতে বিনিয়োগ করার যে রাস্তা চিনিয়েছিলেন তার একটি বড় ফল আজ ভারতের দরিদ্ররা হাতেনাতে ভোগ করছে আর সেখানকার অবস্থাসম্পন্নরা ‘দারিদ্র্য বাণিজ্যে’র মুনাফা লুটছে শেয়ারে টাকা খাটিয়ে। ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে ভারতের খ্যাতিমান হয়ে ওঠার এটিও একটি কারণ। গত বছর অগাস্ট মাসে ইউনূসের বিশেষ বন্ধু বিক্রম আকুলা ভারতে তার এস.কে.এস. মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৬৩০ কোটি রূপি সংগ্রহ করেন ৯৮৫ রূপি দামের শেয়ার ছেড়ে। এক মাসের মধ্যে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৪০৫ রূপিতে উঠে গেলেও আত্মহত্যা কেলেঙ্কারির কারণে সরকারি বিধিনিষেধ জারির ফলে ডিসেম্বর মাসে শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ৬৫৩ রূপিতে। ক্ষুদ্রঋণের সঙ্গে ভারতের প্রাসঙ্গিকতার সূত্রে তথ্যগুলো দেয়া হলো এবং এ থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কিছু বৈশ্বিক ধারাও অনুধাবন করা সম্ভব হবে। যদিও সম্প্রতি ইউনূস ক্ষুদ্রঋণের অনেক কিছু নিয়ে আপাত দ্বিমত প্রকাশ করছেন কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই বৈশ্বিক ধারা তাঁর হাতেই রচিত হয়েছে। এই দ্বিমত পোষণ হয় অসত্য ভাষণ অথবা পুঁজির মৌল চরিত্র সম্পর্কে তাঁর অর্বাচীন চিন্তাভাবনারই প্রকাশ, স্থানাভাবে যা নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ থাকছে না।
নীরেনবাবুর শিশুর প্রশ্ন ‘... রাজা তোমার কাপড় কোথায়?’
সর্বাধিকসংখ্যক পুরস্কারে ভূষিত ইউনূস বিশ্বপর্যায়ের একজন কুশীলব। ‘গরিবের ব্যাংকওলা’ হিসেবে খ্যাতি থাকলেও তাঁর ওঠাবসার পরিধি কয়েক দশক ধরেই রাজদরবার আর কর্পোরেট হেডকোয়ার্টারে। ক্ষুদ্রঋণকে বিপথে চালিত করার জন্য যাদের দিকে তিনি আঙ্গুল দেখাচ্ছেন তারা সবাই দারিদ্র্য বিমোচনে আজও তাঁর সাঙাত। এখন অবশ্য তিনি আর ক্ষুদ্রঋণের মধ্যে নিজেকে আটকে রাখছেন না। দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাবার জন্য এখন তাঁর মুখে ‘সামাজিক ব্যবসা’ নামের নতুন মন্ত্র। সেই সামাজিক ব্যবসার সাথী হয়েছে বিশ্বের বড়-বড় সব কোম্পানি--ফ্রান্সের ড্যানোন (খাদ্য), ভিওলিয়া (পানীয়জল) ও আইডি গ্রুপ (পোশাক); জার্মানির অ্যাডিডাস (জুতা), জাপানের ইউকিগুনি (কৃষিপ্রযুক্তি), ইউনিকলো (তৈরি পোশাক); আর যথারীতি আছে সংবাদমাধ্যম, নামীদামী পণ্ডিত এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যেই খোলা হয়েছে সামাজিক ব্যবসা সংক্রান্ত নতুন কোর্স, কর্মসূচি ও গবেষণাগার। অতি সম্প্রতি তাঁর ভাবমূর্তিতে ধস নামা সত্ত্বেও এখনও তিনি বিশ্বমঞ্চে পাদপ্রদীপের আলোতে আছেন। আর নীরব কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশে তো কথাই নেই। নীরব ব্যতিক্রম বলার কারণ হচ্ছে নোবেল পুরস্কার পাবার পর বাংলাদেশে তাঁর জনপ্রিয়তা হয়েছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু দেবতার সেই আসন টলতে শুরু করেছিল ২০০৭ সাল থেকে। ভারতে বোঝার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তো ছিলই; এমনকী বাংলাদেশেও ২০০৬ সালে এটা অনেকেই বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে, বিশেষ করে ওই বছর ইউনূসকে নোবেল পুরস্কার দেবার পেছনে বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক পরিকল্পনা কায়েমের একটি বড় সম্পর্ক ছিল। স্বরূপে জাজ্জ্বল্যমান হবার আগেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা হাজির করেছিলেন বদরুদ্দীন উমর তাঁর রাজনৈতিক বিশ্লেষণে২ এবং পরবর্তী ঘটনাবলি এসব বিশ্লেষণকে সঠিক বলেই প্রমাণ করেছে। তাঁর রাজনৈতিক চেহারা উন্মোচিত হওয়া শুরু হলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা সন্দিহান ও বীতশ্রদ্ধ হওয়া শুরু করে এবং তাঁর ব্যাপারে কিয়দংশে মোহমুক্তি ঘটা শুরু হয় সচেতন অংশের মধ্যে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বপর্যায়ে ইউনূস প্রচারমাধ্যমে প্রশ্নাতীত প্রচার সুবিধা ভোগ করে থাকেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর দুটি কারণ রয়েছে : ১. এনজিও, সাম্রাজ্যবাদী বিভিন্ন চক্রান্ত, ক্ষুদ্রঋণ ইত্যাদি বিষয়ে সংবাদমাধ্যম প্রধানত সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং মূলধারার মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জকারী মতামতকে উপেক্ষা করার ক্ষেত্রেও সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ২. বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের অন্যতম বড় উৎস হচ্ছে মোবাইল ফোন কোম্পানি; যার মধ্যে আবার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ফোনের মালিক গ্রামীণ ব্যাংক। এই দুই কারণে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ক্ষুদ্রঋণ, গ্রামীণ ব্যাংক ও ইউনূসের ব্যাপারে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত নীরব ভূমিকা পালন করে আসছিল। একই কথা ভিন্নভাবে প্রযোজ্য এখানকার বুদ্ধিজীবীদের ব্যাপারে। এরা অধিকাংশই এনজিও ও বিদেশী দাতাসংস্থার বেতনভূক কনসালট্যান্ট হবার সুবাদে প্রকাশ্যে এমন কোনো মত প্রকাশ করেন না যাতে করে তারা মোটা পারিতোষিক প্রদানকারীর বিরাগভাজন হতে পারেন। সেজন্য বাংলাদেশ জুড়ে ইউনূস বিষয়ে রয়েছে অভূতপূর্ব নীরবতা। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, গ্রামীণ ফোনের সিংহভাগের মালিক নরওয়ের টেলিনর এর বাংলাদেশে কাজের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে গুরুতর কেলেঙ্কারি (অ্যাসিডের চৌবাচ্চায় শিশু শ্রমিক পড়ে যাওয়া, বিলবোর্ড লাগাতে গিয়ে শ্রমিক নিহত হওয়া প্রভৃতি) নিয়ে ডেনিশ সাংবাদিক টম হাইনম্যান-এর ‘এ টাওয়ার আব প্রমিজেস’৩ প্রামাণ্যচিত্রে ২০০৮ সালের মে মাসে প্রচারের ফলে সারা দুনিয়ায় হইচই সৃষ্টি হয়ে টেলিনরের প্রধান নির্বাহীর চাকরি যাবার উপক্রম হলেও, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম এ বিষয়ে নীরব থাকে।৪ অবশেষে, এই অবস্থায় একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে যায় গত ৩০ নভেম্বর নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এনআরকে-তে প্রচারিত টম হাইনম্যানের ‘কট ইন মাইক্রো ডেট’৫ নামের নতুন প্রামাণ্যচিত্রকে কেন্দ্র করে। টমের প্রামাণ্যচিত্রটি প্রচার হবার পর হঠাৎ করে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীও যেন দেখতে পায় তাদের রাজা উলঙ্গ!
দারিদ্র্য জাদুঘরের অবস্থা
ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাবার বিশ্বপর্যায়ের ধাপ্পাবাজি নিয়ে বাংলাদেশে শক্তিশালী সমালোচনা ছিল বদরুদ্দীন উমর, আনু মুহাম্মদ, ফারুক চৌধুরী প্রমুখের। সাম্প্রতিক সময়ের আগেই বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তেমন কোনো সমালোচনা খুব একটা ছিল না। সম্প্রতি এই অবস্থা পাল্টাতে শুরু করেছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিক টমের প্রামাণ্যচিত্রটি এ ক্ষেত্রে অবস্থার মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছে জোরালোভাবে--বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এই প্রতিবেদন ছাপাখানায় যাবার আগে (১৫.১.১১) ইউনূসের বন্ধু হিলারি ক্নিনটন শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন রাষ্ট্রীয় কাজে; কিন্তু পর্যবেকদের অনুমান ফোন করার আসল কারণ ইউনূসকে রক্ষা করার তদবির করতে। প্রামাণ্যচিত্রে টম দুটি বিষয় তুলে ধরেছেন। টমের ভাষ্যে ‘আমাদরে প্রামাণ্যচত্রিরে মূল বক্তব্য: ক্ষুদ্রঋণ সত্যি দারদ্র্যি দূর করে? গরীবরে হাতে একটা ক্ষুদ্র অংকের টাকা দেওয়া এবং বাকি কাজটুকু ‘বাজারকে’ করতে দেওয়াই কি দারদ্র্যি দূর করা? মেক্সিকো, ভারত ও বাংলাদশেরে অসংখ্য দরদ্রি মানুষরে সঙ্গে কথা বলার পর আমার তা মনে হয় না। ... আমার জানা মতে, এবারই প্রথম কোনো টেলিভিশিন-প্রামাণ্যচত্রি ভিন্ন দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়েছে, দেখাতে চেয়েছে মুদ্রার উল্টো পিঠ।’
এর পাশাপাশি টম নরওয়ের বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা নোরাডের মহাফেজখানায় ‘গোপনীয়’ হিসেবে চিহ্নিত নথিপত্র ঘেঁটে বৈদেশিক সাহায্যের টাকা নিয়ে ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের অনিয়ম করার বিষয়টি উদঘাটন করে দেখান যে, ‘দারদ্র্যি দূর করার জন্য র্ভতুকি হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯৯৬ সালে দেয়া বিপুল অর্থ থেকে ১০ কোটি ডলাররেও বেশি ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ থেকে ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ নামে নিজের অন্য এক প্রতষ্ঠিনে সরিয়ে নেন ইউনূস। ১০ কোটি ডলাররে মধ্যে সাত কোটি ডলাররেও বেশি অর্থ ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ নামরে প্রতিষ্ঠানেই থেকে যায়। এরপর গ্রামীণ কল্যাণরে কাছ থেকে ওই অর্থ ঋণ হিসেবে নেয় গ্রামীণ ব্যাংক। বৈদিশিক সাহায্যরে অর্থ নিয়ে অনিয়মের ঘটনা গোপন রাখার বিষয়ে নোরাডরে তখনকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ১৯৯৮ সালরে ১ এপ্রিল লেখা চিঠিতে ইউনূস বলনে, “আপনার সাহায্য দরকার আমার। সরকার এবং সরকারের বাইরের মানুষ বিষয়টি জানতে পারলে আমাদের সত্যিই সমস্যা হব।”
যে কেলেঙ্কারির শেষ নেই
টমের প্রামাণ্যচিত্রটি প্রচারের পরপরই এই টেলিভিশন চ্যানেলটির নিজস্ব প্রতিবেদকের আরেকটি প্রামাণ্যচিত্র প্রচারিত হয় গ্রামীণ ফোন নিয়ে ইউনূসের প্রতারণামূলক মিথ্যাগল্পের উপর। এছাড়াও বাংলাদেশী সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে আরো কয়েকটি গুরুতর ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে ইউনূসের কেলেঙ্কারি নিয়ে; যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাবা ও তিন ভ্রাতার সাথে তার নিজস্ব মালিকানার একটি প্রেস ও প্যাকেজিং কোম্পানির সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে তাঁর নিজের করা ব্যবসায়িক চুক্তি ও এই প্রতিষ্ঠানকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তিন কোটি টাকা ঋণ দেয়া বিষয়ে।৬
দারিদ্র্য জাদুঘরের একমাত্র দর্শনীয় বস্তু
এসব কদর্য কেলেঙ্কারি দেখে সঙ্গতভাবে অনুমান করা যায় যে, গত কয়েক দশক ধরে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে যে অতিকথা গড়ে তোলা হয়েছিল সেই ‘পভার্টিস্ট্রীট’ও মনে হয় ওয়ালস্ট্রীটের লজ্জাজনক কেলেঙ্কারির রাস্তা ধরে বিশ্বমঞ্চ থেকে প্রস্থানের পথে পা বাড়িয়েছে। আর ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে দারিদ্র্যকে জাদুঘরের দর্শনীয় বস্তু হিসেবে পরিণত করার ঘোষণা দিয়ে বিশ্বরঙ্গমঞ্চ দাপিয়ে বেড়ানো এবং দুনিয়ে জুড়ে দরিদ্র মানুষের সাথে মশকরাকারী ‘গরিবের ব্যাংকওলা’ মুহাম্মদ ইউনূস দারিদ্র্যের বদলে নিজেই হয়তো জাদুঘরে ঠাঁই নেবেন ‘দ্য ম্যান হু সোল্ড আইফেল টাওয়ার’ হিসেবে পরিচিত ভিক্টর লাস্টিং এর মতো কুখ্যাত ভাঁওতাবাজদরে সারিতে।
নোট:
১. আমেরিকান এনজিও কেয়ার ১৯৯৭ সালে ৩৫ লাখ ডলার (যার মধ্যে মার্কিন সরকারের বা জনসাধারণের অর্থ ছিল ৪৫০,০০০)দিয়ে পেরুতে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম চালু করেছিল। ২০০৯ সালের শেষ দিকে পেরুর বৃহত্তম ব্যাংক ব্যাঙ্কো দি ক্রেদিতো এই কার্যক্রমটি ৯,৬,০০০,০০০ ডলার দিয়ে কিনে নেয়। এই অর্থ থেকে কেয়ার নগদ ৭,৪,০০০,০০০ লাখ ডলার মুনাফা নিয়ে ফেরত যায় আমেরিকাতে। মেক্সিকো তে ক্রীমোস ক্ষুদ্র ঋণের জন্য আদায় করে বার্ষিক ১২৫% সুদ। কমপার্টামোস নামের সেখানকার আরেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আদায় করে ৮০% সুদ। নিকারাগুয়ায ৩৫% সুদ আদায় হয় বলে দানিয়েল ওর্তেগা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধ না করার আন্দোলনকে সমর্থন জানিযেছেন। ল্যাপো নামে নাইজেরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান বার্ষিক ১২৬% সুদ আদায় করে। (নিউ ইয়র্ক টাইমস ১৩.৪.২০১০ এবং হনলুলু স্টার-অ্যাডভাইটাইজার ৬.১.২০১১)
২. ‘বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ও নোবেল শান্তি পুরস্কার’ (১৬.১০২০০৬) এবং ‘রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য ইউনূসের প্রস্তাব’ (২১.১১.২০০৬)। ডক্টর ইউনূসের দারিদ্র্য বাণিজ্য বইতে অন্তর্ভুক্ত দুটি নিবন্ধ। সংস্কৃতি প্রকাশনী। ঢাকা। ২০০৬।
৩. http://tomheinemann.dk/a-tower-of-promises/
৪. www.aftenposten.no/english/business/article2422108.ece
www.aftenposten.no/english/business/article2434071.ece
৫ http://www.flipthecoin.org/?p=301
৬. http://ns.bdnews24.com/blog/en/index.php/bdnews24com/435
----------------
লেখাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত অনীক পত্রিকার আমন্ত্রণে লিখিত এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০১১ যুগ্ম সংখ্যায় (কলকাতা বইমেলা) প্রকাশিত। ১৫.১.২০১১
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন