[মূল লেখাটি ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার পরপরই লেখা এবং প্রথমত বাংলাদেশের দৈনিক 'সমকাল' এবং কলকাতার মাসিক 'অনীক' এ প্রকাশ হয়েছিল। এটি 'অনীক' পত্রিকার ৪০ বছর পূর্তি স্মারক গ্রন্থ 'বাংলাদেশ প্রসংঙ্গ' অন্তর্ভুক্ত। লেখাটির ইংরেজি ভাষ্য প্রকাশ হয়েছিল New Age (Dhaka), Frontier (Kolkata), এবং Counter Currents, Meghbarta সহ অনেক ওয়েবসাইটে। মূল লেখার থেকে এটিতে নতুন কিছু বিষয় সংযোজিত হয়েছে, মূল বক্তব্যের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। তবে এ সময়ের মধ্যে তাতে মুহাম্মদ ইউনূসের পুরস্কার প্রাপ্তির তালিকা আরো দীর্ঘতর হয়েছে বটে; যা হাল নাগাদ না করলেও কোনো অসুবিধার কারণ ঘটেনি।]
‘গরিবের ব্যাংকওয়ালা’ নামে খ্যাত গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তির পর দেশজুড়ে আনন্দের বন্যা বইছে। দারিদ্র্য ও দেউলিয়াত্বে জর্জরিত একটি সমাজের উচ্চকোটি শ্রেণীর অন্তর্নিহিত নিঃস্বতা ও ব্যর্থতা ঢেকে রাখার জন্য এমন বল্গাহীন নিঃশর্ত আনন্দের বন্যা বইয়ে সাধারণ মানুষকে ‘ফিল গুড’ভাবে মজিয়ে দিতে জনমতের নির্মাতা ও গণমাধ্যম যে অতিশয় সক্রিয় হবে, নয়া-উদারবাদী বাজারি আমলে সেটাই স্বাভাবিক। যেকোনো সাফল্য ও বিজয়ের মতোই মুহাম্মদ ইউনূসের এই বিরল সম্মান ও স্বীকৃতি প্রাপ্তির বিষয়টিকে প্রশংসার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্লেষণ করে দেখার বিষয়টি নিঃশর্ত ও মোহাবিষ্ট আনন্দের প্লাবনে তলিয়ে যাচ্ছে। জনমত নির্মাতা ও গণমাধ্যমের সৃষ্ট এই বল্গাহীন ফূর্তিস্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিভিন্ন পুরস্কার-খেতাব-ডিগ্রি-সম্মননা প্রাপ্তির পেছনের রাজনীতি তুলে ধরার একটি আংশিক (পর্যাপ্ত ও প্রামাণিক তথ্যের অভাবে) প্রয়াস এই লেখা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো এত পুরস্কার, খেতাব ও ডিগ্রি পৃথিবীতে আর কেউ পেয়েছেন কিনা তা অনুসন্ধানের বিষয় হতে পারে। দেশী-বিদেশী ৬৮টি পুরস্কার, ১৫টি সম্মাননা এবং বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৮টি সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন তিনি; গ্রামীণ ব্যাংক লাভ করেছে ৮টি দেশী-বিদেশী পুরস্কার। মূলধারার উন্নয়ন নীতি-নির্ধারকদের কাছে গ্রামীণ ব্যাংক মডেলের উপযোগিতা--বাগাড়ম্বর অনুযায়ী দারিদ্র্য দূর করা না গেলেও তা সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং বৃহদাকারের লগ্নীকারীদের অলস পুঁজি লাভজনকভাবে বিনিয়োগের কার্যকর, বিকল্প ও প্রাতিষ্ঠানিক পন্থা দেখানো --তাঁর জন্য এসব স্বীকৃতি নিয়ে এসেছে। তাঁর এই পন্থা নয়া-উদারবাদী জমানায় জাতিসংঘ থেকে শুরু করে সিটিব্যাংকের মতো লগ্নীকারী ও বিভিন্ন প্রযুক্তি বিক্রেতাদের কাছে কার্যকর প্রতিপন্ন হওয়ায় তারা অতিকথামূলক ভাবমূর্তি নির্মাণের জন্য তাঁকে বিপুলভাবে ভূষিত করেছে পুরস্কার ও খেতাবে; আসন দিয়েছে বড়-বড় কর্পোরেশনের তথাকথিত ‘স্বাধীন’ ও ‘মুনাফার জন্য নয়’ ফাউন্ডেশনের পরিচালকমণ্ডলীতে। ভিখারিপুত্র ও রাজকুমারের বন্ধুত্বের গল্পের মতো রাজা-রাণী-প্রেসিডেন্ট-ফার্স্ট লেডিদের সঙ্গে তাঁর সখ্যতার রূপকথাতুল্য মায়াবী ভাবজগত তৈরি করা হয়েছে। কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত পণ্ডিত, গণমাধ্যম ও জনমত নির্মাতাদের সৃষ্ট এই ভাবজগতের আলোকচ্ছটায় সাধারণ মানুষ মোহাবিষ্ট হয়ে হারিয়ে ফেলছেন ঘটনার মর্মবস্তু অনুধাবনের ক্ষমতা। আর এই ভাবমূর্তিকে আশ্রয় করে মূলধারার রাজনৈতিক-অর্থনীতির পরিমণ্ডলে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পুঁজির লগ্নী ও প্রযুক্তি বিক্রির ক্ষেত্রে, ইউনূস হয়ে উঠেছেন বিশিষ্ট সফল ব্রোকার বা দালাল (এই অভিধার মধ্যে কোনো নেতিবাচক অর্থ নিহিত নেই, ব্রোকারি, লবিয়িং ইত্যাদি পেশা হিসেবে বিবেচিত)। বড়-বড় কর্পোরেশনের পক্ষে ব্রোকারির কাজটি সুদক্ষভাবে সম্পাদনের কারণে পুনঃপুন পুরস্কৃত হয়েছেন বা হচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস। এসব পুরস্কার চেইন রিঅ্যাকশনের মতো টেনে এনেছে একটি আরেকটিকে।
পুরস্কারের রয়েছে নিজস্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও মতাদর্শ। কোনো পুরস্কার কারা দিচ্ছে, কাকে দিচ্ছে, কেন দিচ্ছে, কেনই বা কেউ তা পাচ্ছে না (শান্তির জন্য মনোনীত হয়েও জোসেফ স্ট্যালিন নোবেল পুরস্কার পাননি) বা পেলেও প্রত্যাখ্যান করছে (জাঁ পল সার্ত্রে ও অরুন্ধতী রায়), ভেবে দেখার মতো এমন বিষয়গুলো মাথায় রেখে মুহাম্মদ ইউনূসের পুরস্কার ও খেতাব প্রাপ্তির সবগুলো না হলেও কিছু কিছু ঘটনাকে খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
তিনি ১৯৯৪ সালে ‘বিকল্প নোবেল’ হিসেবে খ্যাত ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ পেয়েছিলেন। এই পুরস্কারের ৭৪টি পৃষ্ঠপোষকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে: বিতর্কিত মোনসান্তো, কার্গিলসহ আমেরিকার আরও কয়েকটি বৃহৎ সয়াবিন ও কৃষিজাত পণ্যের কোম্পানি; মার্কিন সরকারের এগ্রিকালচারাল রিসার্চ সার্ভিস, কয়েকটি পুঁজি লগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান ও কোকা-কোলা কোম্পানি। ইউনূস এই পুরস্কার পাবার পর ক্ষতিকর জেনেটিক কৃষি প্রযুক্তির বাজারজাতকারী হিসেবে সারা দুনিয়ায় ধিকৃত এবং উন্নত বিশ্বে কোণঠাসা হওয়া প্রতিষ্ঠান মোনসান্তোর জিএম প্রযুক্তির কৃষি ও আগাছানাশক বাংলাদেশে বাজারজাতকরণের জন্য যৌথ উদ্যোগে--মোনসান্তোর অর্থ ও প্রযুক্তি এবং গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের জালে আটকানো দরিদ্র কৃষক--কোম্পানি খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, গ্রামীন-মনসান্তো সেন্টার খোলার জন্য গ্রহণ করেছিলেন দেড় লাখ মার্কিন ডলার (২৫.৬.৯৮)। ব্রোকারির এই কাজটি শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় ক্ষুদ্র ঋণ শীর্ষ সম্মেলনে; এই সম্মেলনেই বহুজাতিক কোম্পানি মোনসান্তো দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাবার জন্য অতীব উতলা হয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের শরণাপন্ন হলে তাঁরই আগ্রহে দেশীয় কৃষি ধ্বংসের এই যৌথ উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের মুখে, ১৫০,০০০ ডলার দান গ্রহণের এক মাসের মাথায়, কোনো রকম দুঃখ প্রকাশ বা ভুল স্বীকার না করে তিনি এই ক্ষতিকর উদ্যোগ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিলেন। বাংলাদেশের কৃষিকে ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষার জন্য ভারতীয় দার্শনিক ও পরিবেশবাদী কর্মী বন্দনা শিবা, বাংলাদেশের প্রয়াত কবি ও আমলা আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, 'নয়া কৃষি আন্দোলন'সহ আরও অনেকেই আমাদের কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা দাবি করতে পারেন।
ক্ষুদ্র ঋণের মতো ‘মানবাধিকার’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কীভাবে দরিদ্রদের কাছে নিখরচে প্রযুক্তি বিক্রি করে দেশের কৃষি ও খাদ্যের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে পরনির্ভরশীলতা সৃষ্টি করা যায় এটা তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিষয়টি বোঝার জন্য একই কৌশলে গড়া মুহাম্মদ ইউনূসের ‘টেলিফোন লেডি'দের ‘কিংবদন্তী’ স্মরণ করা যেতে পারে। মোনসান্তোর সঙ্গে ইউনূসের লেনদেনের ঘটনার ভিত্তিতেই তাঁর পাওয়া অনেক পুরস্কার ও ডিগ্রির গূঢ়ার্থ অনুধাবন করা যেমন সহজ হবে, তেমনি বোঝা যাবে নানা দেশের রাজান্যবর্গসহ (স্মর্তব্য যে, এসব রাজারাজড়াই অনেক বৃহৎ কর্পোরেশনের মালিক-পরিচালক-বিনিয়োগকারী-পৃষ্ঠপোষক ও ব্রোকার) বড় বড় কর্পোরেশন, কর্পোরেট মালিকানাধীন মিডিয়া ও তাদের মতাবলম্বী পণ্ডিতরা কেন ক্সুদ্র ঋণের গুণগানে পঞ্চমুখ। বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে মোনসান্তোর কৃষি প্রযুক্তি বাজারজাতকরণের সঙ্গে যেমন ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ’-এর সম্পর্ক ছিল, তেমনিভাবে গরিবদের জন্য মোবাইল ফোন চালুর কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ব্রিটেনের ওয়ান ওয়ার্ল্ড ব্রডকাস্টিং ট্রাস্ট মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৮) ও ওয়ার্ল্ড টেকনোলজি নেটওয়ার্ক অ্যাওয়ার্ড (২০০৩), স্পেনের টেলিসিনকো অ্যাওয়ার্ড (২০০৪) এবং কর্পোরেট ব্যবসায়িক স্বার্থ প্রসারের জন্য আমেরিকার দ্য ইকোনমিস্ট ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড (২০০৪) ও লিডারশিপ ইন সোশ্যাল এন্ট্রোপ্রেনিয়রশিপ অ্যাওয়ার্ডসহ (২০০৪) আরও অনেক পুরস্কারের।
গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৪ সালে যে পিটার্সবার্গ প্রাইজ পেয়েছিল তার পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে জার্মান টেলিফোন কোম্পানি ডয়েশ টেলিকোম এবং মার্কিন সফ্টওয়্যার কোম্পানি মাইক্রোসফট।
নোবেল পাবার কয়েক দিন পরই মুহাম্মদ ইউনূস গ্রহণ করেছেন সিউল পিস প্রাইজ। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করতে মাত্র ৯০ দিনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ওই সময়ের মধ্যে কোরিয়ান ইপিজেড চালুর ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার তাগিদ দিতে ভোলেননি তিনি এই পুরস্কারের নিতে কোরিয়ায় যাবার আগে এবং ফিরে এসেই। কোরিয়ান ব্যবসায়ীদের জন্য ওকালতিতে অতি সরব হলেও, কোরিয়ায় অভিবাসী বাংলাদেশী নির্যাতিত শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাঁকে কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি একবারও। অতি নিম্নস্তরের কাজ করা এসব মজুরের অধিকার নিয়ে কথা বলাটা শান্তি পুরস্কারের সম্মানের সঙ্গে মানানসই নয় বলেই হয়ত তিনি মৌন থেকেছেন এ বিষয়ে! নোবেল পুরস্কার গ্রহণের সময় ভাষণ দিতে গিয়ে গ্রামীণফোনের মালিকানা দাবি করতে তিনি যতখানি সোচ্চার হয়েছেন, অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণ-বঞ্চনা লাঘবে তিনি সিউলে তেমন সোচ্চার হলে দুর্দশাগ্রস্ত বাংলাদেশী শ্রমিকরা কিছুটা উপকার পেত এবং কোরিয়ার সরকারের উপর এক ধরনের চাপ তৈরি হতো। ওকালতির ব্যাপারটি দ্বিপীয় স্বার্থ নিয়ে হলেই কি শোভনীয় হতো না?
কোনো কোনো বিষয়ে ড. ইউনূসের অতিমাত্রায় সরবতা এবং মৌনতার বিষয়টির সঙ্গে পুরস্কারের অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। সেজন্য পৃষ্ঠপোষকদের দিকে তাকালে পুরস্কারের প্রাপ্তির পেছনের কারণটি অনেক সময় বোঝা সহজ হয়ে ওঠে বৈকি!
ঘুষ, দুনীর্তি আর অস্বচ্ছতার মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগের নামে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে যেখানে অবাধ অধিকার দেয়া হচ্ছে, বহুজাতিক কোম্পানির লুন্ঠনের হাত থেকে ফুলবাড়ি কয়লা খনি রক্ষার জন্য অর্ধ-ডজন দরিদ্র মানুষের বুকের রক্ত যখন শুকিয়ে যায়নি, এশিয়া এনার্জির মতো কোম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির পরিণতি কী হয়েছে দেশবাসী যখন তা জানে না, তখন কোরিয়ান ইপিজেড চালুই করাই আমাদের অন্যতম রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত বৈকি! কারণ ফুলবাড়ি কয়লা খনি রক্ষার জন্য, মাগুড়ছড়া-টেংরাটিলা গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর অপূরণীয় ক্ষতির জন্য দায়ী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি ও ক্ষতিপূরণ আদায়ে সোচ্চার হবার জন্য কোনো পুরস্কার নেই; পোশাক তৈরি কারখানার শত-শত অগ্নিদগ্ধ নারী শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করার জন্য ওয়াশিংটনে লবিইস্ট হিসেবে কাজ করার জন্য নেই বিজিএমইএ-র মতো কোনো পৃষ্ঠপোষক!!
পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষা ও গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল অর্থের অনেকখানিই আসে বিভিন্ন কর্পোরেশন এবং তাদের প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশন ও এনডাওমেন্ট প্রদত্ত অনুদান, সহায়তা, বিনিয়োগ ইত্যাদি থেকে। স্বাভাবিক কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের যে কোনো প্রভাব থাকে না তা বলা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা পর্ষদ, বোর্ড অফ রিজেন্টেস, শিকমণ্ডলী প্রভৃতির মতাদর্শ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, পাঠক্রম ও গবেষণার বিষয় ইত্যাদির ওপর তাদের যথেষ্ট প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব থাকে। নিজেদের স্বার্থ প্রসারের ক্ষেত্রে এই প্রভাব কর্পোরেশনগুলো প্রয়োজন মতো ভালোভাবেই ব্যবহার করে। উৎকোচ হিসেবে বা ভাবমূর্তি গড়তে কাউকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান এক্ষেত্রে একটি অতি প্রচলিত পন্থা। বিভিন্ন দেশের অনেক ঘৃণিত শাসকেরও যখন এ ধরনের সম্মানসূচক ডিগ্রিতে ভূষিত হবার নজির আছে, তখন কর্পোরেট রাজ্যের সেবার জন্য ড. ইউনূসের ডজন দুয়েক ডিগ্রি প্রাপ্তি নিতান্তই স্বাভাবিক। এসব ডিগ্রিকে সবর্দা ‘অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি’ হিসেবে গণ্য না করে, গভীরে তলিয়ে দেখার মতো সচেতনতা থাকা আবশ্যক।
‘গত ২৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ২৫ জন ব্যবসায়ী’র একজন হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচিত হয়েছেন। আমেরিকার পাবলিক ব্রডকাস্টিং সিস্টেম (পিবিএস) নামের সরকারি টিভির একটি প্রামাণ্যচিত্রের জন্য হোয়ারটন স্কুল অফ বিজনেস ২০০৪ সালে তাঁকে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর এই খেতাব দিয়েছিল। তাঁর অন্যতম সজাতীয়রা হচ্ছেন: বিল গেটস, জর্জ সোরোস, অপ্রা উইনফ্রে, জেফ বেজোস, রিচার্ড ব্র্যানসন, ওয়ারেন বাফার্ট, মাইকেল ডেল, অ্যালেন গ্রীনস্প্যান, লি লাকোকা, চার্লস সোয়াব, ফ্রেডরিক স্মিথ, এবং স্যাম ওয়াল্টনের মতো ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাশালী ধনকুবেররা। গরিবের সেবক হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূসের যে ভাবমূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে, সেদিক থেকে এই ধনকুবেরদের সঙ্গে তাঁর বাহ্যত কোনো মিল নেই। তাহলে এই গোষ্ঠীতে তাঁর অন্তভুর্ক্ত হবার রহস্যটি কী? নেতৃস্থানীয় বিজনেস স্কুলের নেয়াত খামখেয়ালি কি এটা? তা মোটেই নয়। অধ্যাপক ইউনূস বড় বড় কর্পোরেশনগুলোর পুঁজি লগ্নীর ও প্রযুক্তি বিক্রির নতুন পথ প্রদর্শক, ব্রোকার এবং সেলসম্যান হিসেবে যে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে প্রচলিত চিন্তাভাবনার বাইরে বিভিন্ন দেশে বিপুলসংখ্যক দরিদ্র বাঁধা-খরিদ্দারদের কাছে পুঁজি ও প্রযুক্তি বাজারজাতকারণে তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক পন্থার সক্ষমতার যে সম্ভাবনা কর্পোরেটমহল দেখতে পাচ্ছে সে কারণেই তারা অত্যন্ত সঠিকভাবে তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের কাতারে ফেলতে কুণ্ঠিত হয়নি।
কয়েকটি উদাহরণে কর্পোরেট জগতের সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ লেনদেনের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝতে সহায়ক হবে। স্টকহোম চ্যালেঞ্জ নামে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উদ্যোক্তাদের যে গ্লোবাল নেটওয়ার্ক রয়েছে তিনি এর পরামর্শকমণ্ডলীর সদস্য। দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাবার আগে, কর্পোরেট ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করাই যে এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য, তা পরামর্শকমণ্ডলীর বাকি সদস্যদের পরিচয়ের দিকে তাকালে স্পষ্ট বোঝা যাবে। এখানে ইউনূসের সহযোগীরা হচ্ছেন: সান মাইক্রোসিস্টেমস নামের নেতৃস্থানীয় কম্পিউটার কোম্পানির মুখ্য গবেষক ও সাইন্স অফিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট; রাশিয়া, পশ্চিম ইউরোপ ও আমেরিকার এক নেতৃস্থানীয় উদ্যোক্তা; ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক সদস্য, এবং এরিকসন কোম্পানির প্রেসিডেন্ট ও সি.ই.ও. ।
মুহাম্মদ ইউনূস ফ্রান্সস্থ প্লানেট ফাইনান্স নামের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির জন্য পুঁজি সরবরাহকারী একটি লগ্নী প্রতিষ্ঠানের অ্যাডভাইজারি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি সানোফি অ্যাভেনটিস মাইক্রোসফ্ট, অরেঞ্জ ফ্রান্স, ওরাকল, পাবলিসিস গ্রুপ, সোগেটির মতো ইউরোপ ও আমেরিকার নেতৃস্থানীয় কম্পিউটার ও টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলো এই প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম অর্থ যোগানদাতা পৃষ্ঠপোষক। প্রশ্ন হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে যোগাযোগ প্রযুক্তি বাজারজাতকরণ বা লগ্নীকারীদের অতিরিক্ত অলস-পুঁজি লগ্নী করার উদ্দেশ্যে কী এসব বহুজাতিক কোম্পানি দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে! তাদের এই আকুলতা মোনসান্তোর মতো বিপজ্জনক না হলেই গরিবদের মঙ্গল!
মুহাম্মদ ইউনূসকে আমরা এতই শান্তিবাদী এবং আমুদে প্রকৃতির বলে জানি যে, সারা দেশে একসঙ্গে পাঁচ শতাধিক বোমা বিস্ফোরিত হলেও তিনি কোনো অশান্তি তৈরি করেননি, ধর্মের লেবাস পরা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। সারা বিশ্ব ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠলেও তিনি নিরলস শান্তিতে দারিদ্র্য জাদুঘর নির্মাণের কাজে ধ্যানমগ্ন থেকেছেন অবিচলিতভাবে। এই শান্তিবাদীই হঠাৎ করে পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে ভীষণভাবে ক্ষেপে ওঠেন, দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে শান্তি পুরস্কার নেবার মুহূর্তে; উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার শত্রু বলেই কি তাঁকে এই হুঙ্কার দিতে হয়েছিল গুমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে নিতে? সর্বোপরি, নুন খেয়ে নিমকহারামি তো করা যায় না!
প্লানেট ফাইনান্স এর অ্যাডভাইজারি বোর্ডে মুহাম্মদ ইউনূসের মতো শান্তিবাদী এবং পারমাণবিক অস্ত্রবিরোধীর একজন বিশেষ সহযোদ্ধার কথা অনেকের কাছেই হয়তো অজানা। সেই বিশেষ ব্যক্তিটি হচ্ছেন ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী জায়নবাদী-যুদ্ধবাজ সিমন পেরেজ। নোবেল পুরস্কারের গুণে তাঁর গায়ে শান্তির নামাবলি চড়লেও সিমন পেরেজের হাতে লেগে রয়েছে প্যালেস্টাইনি ও লেবাননি আরব নারী-শিশুদের, শাবরা-শাতিলা আর কোনা উদ্বাস্তু শিবিরের নিরস্ত্র শরণার্থী হত্যার রক্ত। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের নিন্দায় পঞ্চমূখ হলেও, ইসরায়লের পারমাণবিক অস্ত্রের জনক হিসেবে পরিচিত সিমন পেরেজের সঙ্গে মিলে দারিদ্র্য জাদুঘর নির্মাণে কাজ করতে কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূসের বিবেক দংশনের কথা এখনও শোনা যায়নি।
পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ সিমেন্ট ও বিভিন্ন নিমার্ণ সামগ্রীর প্রস্তুতকারক সুইস কোম্পানি হোলসিম এর (৭০টি দেশে পরিচালিত ব্যবসা থেকে ২০০০ সালে তাদের আয় ছিল ৮.২ বিলিয়ন ডলার) অর্থে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ‘স্বাধীন’ হোলসিম ফাউন্ডেশনের অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য হচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস। এমন ‘স্বাধীন’ ফাউন্ডেশনগুলো কেন প্রতিষ্ঠিত হয়, কী করে, ইত্যাদি ধারণা পাওয়ার জন্য রকেফেলার বা ফোর্ড ফাউন্ডেশনের নিন্দিত কার্যকলাপ সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখা সহায়ক হতে পারে।
বিভিন্ন ব্যবসায়িক কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও ক্ষুদ্র ঋণকে সারা বিশ্বে পুঁজি বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি বিক্রির বাহন হিসেবে ব্যবহার করার জন্য মুহাম্মদ ইউনূসের আছে নিজস্ব সাংগঠনিক ব্যবস্থা। গ্রামীণ ব্যাংক একটি ব্র্যান্ড নেম বা ফ্রানচাইজের মতো কাজ করে। পৃথিবীর শতাধিক দেশে গ্রামীণ ব্যাংক আদলে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। নয়া-উদারবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া নীতিমালা শিথিল করলে ২০০৬ সালের মে মাস থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে, বিশেষ করে চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে, ‘স্থাপন-পরিচালনা-হস্তান্তর’ ভিত্তিতে (বিল্ড-অপারেট-ট্রান্সফার) গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দক্ষিণ ভারতে চালু হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম।
পৃথিবীর নানা দেশে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় গ্রামীণ ফাউন্ডেশন ইউএসএ। মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব পর্যায়ে গ্রামীণ ব্যাংকের কৌশলগত সহযোগী গ্রামীণ ফাউন্ডেশন ইউএসএ-র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বোর্ড মেম্বার। ৫২টি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ২২টি দেশে এই প্রতিষ্ঠানটি ৭০ লাখ মানুষের মধ্যে কাজ করে। এই সংস্থাটি ইনফরমেশন টেকনোলজি ও গ্রামের মানুষের জন্য ফোন বিক্রি এবং পুঁজি বাজার এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের অর্থ ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের কাছে লগ্নীর কাজ করে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ লগ্নী প্রতিষ্ঠান এবং ৬৩টি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে চিলির সাবেক স্বৈরশাসক আগুস্তো পিনোশের ২৫ মিলিয়ন ডলার পাচারে সহায়তাকারী হিসেবে কুখ্যাত সিটিগ্রুপ/সিটি ব্যাংকের সঙ্গে গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূসের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সিটিগ্রুপ ও সিটিব্যাংক দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাবার অন্যতম বড় কুশীলব হয়ে উঠেছে বর্তমানে। কুখ্যাত এই ব্যাংকটির মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে দৈনিক প্রথম আলো তিন দিন ধরে ব্যাংকটির লোগো মুদ্রণ করে ক্ষুদ্র ঋণ শীর্ষ সম্মেলনের সংবাদের মাঝখানে! মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা বোর্ডে রয়েছে সিটিব্যাংক, সিটিগ্রুপ, কেইন প্রপার্টি কোম্পানি, গাইডস্টার, মাইক্রোসফ্ট প্রভৃতি বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তারা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্ষমতা ও লেনদেন বা পাওয়ার ব্রোকারিংয়ের কাজ কীভাবে চলে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের ঘনিষ্ঠতা থেকে তা আঁচ করা যেতে পারে। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এখতিয়ার বহিভূর্তভাবে (কারণ নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন করার তাঁর কোনো এখতিয়ার নেই, যা অমর্ত্য সেনের আছে) দ্বিতীয়বারের মতো যখন ইউনূসকে নোবেল পুরস্কার দেবার প্রস্তাব করেন, তখন গ্রামীণ ফাউন্ডেশন সিটিগ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে ৫০ মিলিয়ন ডলার (এবং সম্ভব হলে ৩০০ মিলিয়ন) ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ক্লিনটন ইনিশিয়েটিভের অংশীদার হয়েছিল। গ্রামীণ ব্যাংক মডেলে কার্যক্রম বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া, পুঁজি সংগ্রহ করা, ভাবমূর্তি গড়ে তোলা এবং জনসংযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে আমেরিকায় স্থাপিত এই প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আন্তর্জাতিক শক্তি সমবেত করতে অস্ট্রেলিয়াতেও একই নামের একটি পাওয়ার ব্রোকারিং হাউস রয়েছে মুহম্মদ ইউনূসের।
ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক লগ্নী পুঁজি ও প্রযুক্তিকে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্রদের দরজায় এনে লগ্নী ও বিক্রি করার ক্ষেত্রে বিরল উদ্ভাবনী কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক কর্পোরেট জগতের কাছে স্বাভাবিকভাবেই একজন প্রিয়পাত্র। বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ (আমাদের ঋণখেলাপি শিল্পপতিদের স্মর্তব্য) তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক লগ্নীকারীদের অর্থের নিরাপদ (গরিবরা ঋণ নিয়ে ৯৮% ক্ষেত্রে ফেরত দেয়) বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেবার কৃতিত্বের কারণেই মুহাম্মদ ইউনূসের স্থান হয়েছে বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের কাতারে। এই অসাধারণ সাফল্যের জন্যই আন্তর্জাতিক পুঁজির মালিকরা অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তাঁর দুনিয়াজোড়া ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে নানা পুরস্কার, ডিগ্রি, খেতাব আর রাজা-রাণী-প্রেসিডেন্ট-ফার্স্ট লেডিদের সঙ্গে গলাগলির কাহিনী ছড়িয়ে দিয়ে। সেই কাহিনীরই স্বীকৃতি মিলল আর প্রসার ঘটল মুহাম্মদ ইউনূসকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করার মাধ্যমে।
পুনশ্চ: দক্ষিণ আফ্রিকার দৈনিক দি মার্কারি (২৫.১০.০৬) তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সেন্টার ফর সিভিল সোসাইটি নামক থিঙ্কট্যাঙ্কের পরিচালক এবং লুটিং আফ্রিকা: দি ইকোনমিক্স অফ এক্সপ্লয়টেশন শীর্ষক গ্রন্থের লেখক প্যাট্রিক বন্ড লিখেছেন: ‘নরওয়ের নোবেল কমিটি তাহলে কেন ইউনূসকে পুরস্কারটি দিল? অসলোস্থ আমার সহকর্মীরা উল্লেখ করেছেন যে, নরওয়ের এলিটদের মধ্যে ইউনূসের বন্ধুরা, যার মধ্যে নরওয়ের অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় সাবেক আমলা এবং নরওয়ের জাতীয় টেলিফোন কোম্পানি টেলিনরের নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তারা জোরালোভাবে তাঁর পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। উল্লেখ্য যে, টেলিনর লোভনীয় গ্রামীণফোনের ৬২ শতাংশের মালিক এবং বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবসার ৬০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ করে।’
----------
তথ্যসূত্র:
১. ওয়েবসাইট: গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ ফাউন্ডেশন ইউএসএ, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ, কিনটন ইনিশিয়েটিভ, হোলসিম ফাউন্ডেশন, প্লানেট ফাইন্যান্স, মোনসান্তো, জিএআইএ ফাউন্ডেশন, স্টকহোম চ্যালেঞ্জ, নোবেল প্রাইজ, ন্যাচারাল-ল
২. ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা ব্রিটিশ কৃষিবিদ মার্ক গ্রিফিথসের পত্র (জুন ২৯, ১৯৯৮)
৩. ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা বন্দনা শিবার ই-মেইল (জুলাই ৪, ১৯৯৮)
৪. কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফাউন্ডেশন ইন্টারন্যাশনালের ব্রিফিংস
৫. গ্রামীণ-মনসান্তো চুক্তি বাতিল বিষয়ে বিবিসি-র প্রতিবেদন, জুলাই ২৭, ১৯৯৮
৬. ‘জিন ফার্ম টাইটেনস গ্রিপ অন ফুড চেইন’ শীর্ষক ল্ইুস জুরির প্রতিবেদন। দি ইন্ডিপেনডেন্ট (ব্রিটেন), ১৬.৮.৯৮
৭. ‘আানমাসকিং দি মাইক্রোক্রেডিট সাকসেস লাই’ শীর্ষক প্যাট্রিক বন্ডের প্রতিবেদন। দি মার্কারি (দণি আফ্রিকা), ২৫.১০.০৬
[ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চিন্তাভাবনা এবং গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত মূল্যবান বিশ্লেষণ রয়েছে: ওবায়দুর রহমান লিখিত অধ্যাপক ইউনূসের স্বপ্নবিলাস (শ্রাবণ প্রকাশনী। আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা, Micro Credit: Myth Manufactured. Edited by Farooque Chowdhury. (Shrabon Prokashoni. Dhaka) এবং আমিনুর রহমান লিখিত Women and Microcredit in Rural Bangladesh. (West View Press. Colorado, Boulder, USA) শীর্ষক বই দুটিতে]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন